নিমপাতার উপকারিতা ও অপকারিতা
এই গাছের পাতা, ডাল, শিকড় ও ছাল অনেক ধরনের রোগ ভালো করতে ব্যবহার করা হয়। বিভিন্ন ধরণের ঔষধ তৈরিতে এই গাছ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিমগাছের বিভিন্ন অংশের (যেমন-পাতা, ডাল, শিকড় ও গাছের ছাল ইত্যাদি) গুণাগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
পেজ সূচিপত্রঃ
- সকালে খালি পেটে নিমপাতা খাওয়ার উপকারিতা
- পেটের সমস্যা দূর করতে নিমপাতার উপকারিতা
- ডায়াবেটিসের জন্য নিমপাতা খাওয়ার উপকারিতা
- ক্যান্সার প্রতিরোধে নিমপাতা খাওয়ার উপকারিতা
- শরীরের টক্সিন দূর করতে নিমপাতা খাওয়ার উপকারিতা
- হজমের জন্য নিমপাতা খাওয়ার উপকারিতা
- ত্বকের যত্নে নিমপাতার উপকারিতা
- ইমিউনিটি বাড়াতে নিমপাতার উপকারিতা
- চুলের জন্য নিমপাতার উপকারিতা
- ত্বকের সৌন্দর্য বাড়াতে নিমপাতার উপকারিতা
- মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে নিমপাতার উপকারিতা
- দাঁতের যত্নে নিমপাতার উপকারিতা
- বুক ব্যাথা (কফজনিত কারণে) নিরাময়ে নিমপাতার উপকারিতা
- পেটের কৃমি রোগ নিরাময়ে নিমগাছের উপকারিতা
- জন্ম নিয়ন্ত্রণে নিম তেলের উপকারিতা
- পোকা-মাকড়ের কামড়ে নিমপাতার উপকারিতা
- খোস-পাচড়ার ক্ষেত্রে নিমপাতার উপকারিতা
- নিমপাতার অপকারিতা
- শেষ কথা
নিমপাতার গুণাগুণ ও উপকারিতা
ত্বক সম্পর্কিত উপকারিতাঃ
*
সকালে খালি পেটে নিমপাতা খাওয়ার উপকারিতা
প্রতিদিন সকালে নিমপাতা খাওয়ার উপকারিতা অনেক। নিম গাছ যেহেতু একটি ঔষধি গাছ সেজন্য সকালে খালি পেটে নিমগাছের ২-৩টি পরিষ্কার পাতা চিবিয়ে খেলে অনেক ধরনের উপকার পাওয়া যায়। এটি নিয়মিত খাওয়ার ফলে রক্ত থেকে টক্সিন বের করে রক্তকে পরিষ্কার করে ও রক্ত চলাচল ত্বরান্বিত করে। যখন রক্ত পরিষ্কার থাকবে তখন কোন রোগ-বালাই কাছে আসবে না। তাই জীবনে সুস্থ থাকতে হলে নিমপাতা খাওয়ার অভ্যাস করা উচিত। আর খালি পেটে নিমপাতা খাওয়ার সঠিক নিয়ম বলতে অনেকভাবেই নিমপাতা খাওয়া যায়।
খালি পেটে নিমপাতা খাওয়ার সঠিক উপায়
পেটের সমস্যা দূর করতে নিমপাতার উপকারিতা
পেটের সমস্যা দূর করতে নিমপাতা ব্যবহার করা হয়। পেট ব্যাথা ও পেটে গ্যাস নিরাময়ে দীর্ঘদিন ধরে নিমপাতার ব্যবহার হয়ে আসছে। খাবার হজমে সমস্যা থাকলে নিমপাতা খেলে তা ভালো হয়। তাই নিয়ম করে যদি এই পাতা সেবন করা যায় তাহলে এই ধরনের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
ডায়াবেটিসের জন্য নিমপাতা খাওয়ার উপকারিতা
বর্তমানে বিশ্বে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বেড়ে চলেছে। শরীরে সুগারের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে এই রোগ দেখা দেয়। বর্তমানে বিশ্বে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা হলো ৫৩ কোটির ও বেশি এবং মৃত্যুবরণ করছে প্রতি বছরে ৬৭ লাখ। আর বাংলাদেশে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা হলো ১ কোটি ৩১ লাখ।এই ডায়াবেটিস রোগীরেদর ক্ষেত্রে নিম পাতার রস খাওযার উপকারিতা বলতে গেলে বলতে হয় যে, নিয়ম করে নিমপাতা চিবিয়ে বা রস করে খেলে ইনসুলিন নেয়ার প্রয়োজন হয় না।এই নিমপাতা বা নিমপাতার রস ডায়াবেটিস রোগকে নিয়ন্ত্রণে রাখে।
আরো পড়ুনঃ এলোভেরার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন.....
ক্যান্সার প্রতিরোধে নিমপাতা খাওয়ার উপকারিতা
ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে নিমপাতা সেবন অত্যন্ত উপকারী। কারণ নিমপাতায় নিম্বোলাইড নামক একটি শক্তিশালী ফাইটোকেমিক্যাল আছে যা ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সক্ষম।এই নিমপাতা শরীরে পুনরায় কোষের পুনরুৎপাদন করতে পারে। তাই নিয়মিতভাবে নিম চা সেবন করতে পারলে সবদিক থেকে শরীরের জন্য ভালো ফলদায়ক।
আরো পড়ুনঃ কালিজিরার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন....
শরীরের টক্সিন দূর করতে নিমপাতা খাওয়ার উপকারিতা
হজমের জন্য নিমপাতা খাওয়ার উপকারিতা
কোষ্ঠ্যকাঠিন্য ও হজমের ক্ষেত্রে খুবই উপকারী নিমপাতা। নিমপাতা চিবিয়ে বা রস করে খেলে হজমের সমস্যা দূর করা যায়। কোষ্ঠ্যকাঠিন্যের রোগীরা নিয়মিতভাবে নিমপাতা সেবন করলে এই রোগ থেকে মুক্তি পাবে। এই পাতা সেবন মলত্যাগের প্রক্রিয়াকে সহজ করে। তাই নিমপাতা হজম, গ্যাস ও কোষ্ঠ্যকাঠিন্য রোগের ক্ষেত্রে খু্বই কার্যকর।
আরো পড়ুনঃ কাঁচা হলুদের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন....
ত্বকের যত্নে নিমপাতার উপকারিতা
ত্বকের যত্নে নিমপাতার ব্যবহার হয়ে আসছে অনেক অনেক বছর আগে থেকে। এটি মূলত ব্যবহার করা হয় ত্বকের ব্রণ, এলার্জি, মুখের দাগ, বলিরেখা, মুখের গর্ত ইত্যাদি দূর করার জন্য। চেহারায় তৈলাক্ত ভাব দূর করতেও নিমপাতা সাহায্য করে। এটি ব্যবহারে ত্বকের ইনফেকশন ও কালচে ভাব দূর হয়। নিম তেলে প্রচুর পরিমাণে ফ্যাটি এসিড থাকার কারণে ত্বকের যত্নে এটি খুবই উপকারী।
আরো পড়ুনঃ পেঁয়াজের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন.....
ইমিউনিটি বাড়াতে নিমপাতার উপকারিতা
নিমপাতায় বিভিন্ন শক্তিশালী ও কার্যকরী উপাদানসহ অ্যান্টিভাইরাল, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল থাকায় রোগ-প্রতিরোধে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এসকল উপাদানের উপস্থিতির কারণে কোন রোগকে শরীরে বাসা বাঁধতে দেয় না। সেইসঙ্গে বিভিন্ন সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। বর্তমানে খাবারের ভেজালের কারণে শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। তাই নিয়মিতভাবে নিমপাতা সেবনে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
চুলের জন্য নিমপাতার উপকারিতা
মাথায় নিমপাতা দিলে কি হয় বা চুলের যত্নে নিমপাতার ব্যবহার করা যায় তা বেশির ভাগ মানুষই জানে না। নিমপাতায় অ্যান্টি-ফাঙ্গাল থাকার কারণে চুলের খুশকি ও মাথায় চুলকানি কমায়। এটি ব্যবহারে আরো কিছু উপকার পাওয়া যায় যেমন- চুলের অকালপক্কতা, চুলের বৃদ্ধি ঘটায়, নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। এটি ব্যবহারে রুক্ষ-শুষ্ক চুলকে নরম করে।
- ১ লিটার পানি ফুটিয়ে নিতে হবে।
- ফুটানো পানিতে ৩০-৪০টা নিমপাতা দিতে হবে।
- তা সারারাত ভিজিয়ে রাখতে হবে।
- সকালে গোসলের সময় ভিজিয়ে রাখা পানি দিয়ে চুল ধৌত করতে হবে।
- ভিজিয়ে রাখা পাতাগুলো ব্লেন্ড করে তারসাথে ১ চামচ মধু মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে তা চুলে ব্যবহার করা যায়।
- পেস্ট চুলে লাগিয়ে ১ ঘন্টা পর ধৌত করতে হবে।
ত্বকের সৌন্দর্য বাড়াতে নিমপাতার উপকারিতা
মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে নিমপাতার উপকারিতা
নিমগাছের পাতা, ডাল, শিকড় ও গাছের ছাল প্রতিটির গুণাগুণ ও ব্যবহার অনেক। নিমপাতা চিবিয়ে খেলে ও এর ডাল দিয়ে দাঁতন করলেও মুখের দুর্গন্ধ দূর করা যায়। মুখের দুর্গন্ধের জন্য নিয়মিত দাঁত পরিস্কার রাখতে হবে।
দাঁতের যত্নে নিমপাতার উপকারিতা
নিমগাছের ডাল দাঁতের যত্নে বহুল ব্যবহারকৃত একটি উপায়। গ্রামাঞ্চলে এই পদ্ধতিতে এখনও মানুষ দাঁতের যত্ন নেয়। দাঁতের যত্নে এই নিমগাছের ডাল ব্যবহার করলে দাঁতের মাড়ি ফোলা, দাঁত দিয়ে রক্ত পড়া, দাঁত নড়বড় করা ইত্যাদি বিভিন্ন সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
বুক ব্যাথা (কফজনিত কারণে) নিরাময়ে নিমপাতার উপকারিতাঃ
শীতকালে ঠান্ডা লেগে কফ জমে বুক ব্যাথা করে এই ক্ষেত্রে নিমপাতার রস খেলে বুক ব্যাথা নিরাময় হয়। এক চা চামচ নিমপাতার রস তিন-চারবার সেবন করলে বুক ব্যাথা কমে যায়।
পেটের কৃমি রোগ নিরাময়ে নিমগাছের উপকারিতা
ছোট শিশুদের পেটের কৃমি রোগ বেশি দেখা যায়। আর এই রোগের জন্য নিমগাছের ছাল চূর্ণ করে গরম পানির সাথে খালি পেটে খাওয়ালে খুব দ্রুত উপশম হয়।
জন্ম নিয়ন্ত্রণে নিম তেলের উপকারিতা
নিমের তেল খুবই কার্যকরী একটি গর্ভনিরোধক হিসেবে প্রাচীনকাল থেকেই ব্যবহার করে মানুষ। এই তেল মহিলাদের গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়ায় এবং উর্বরতা কমাতে সাহায্য করে। তাই জন্মনিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে নিম তেল মহিলাদের জন্য নতুন গর্ভনিরোধক হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।
পোকা-মাকড়ের কামড়ে নিমপাতার উপকারিতা
পোকা-মাকড় কামড়ালে নিমপাতার ব্যবহার করা যায়। কোন স্থানে পোকা-মাকড় কামড়ালে সে স্থানে নিম পাতা বেটে পেস্ট করে লাগালে ব্যাথা কমে যায়। এছাড়াও এই গাছের পাতা না থাকলে গাছের ছাল বেটে লাগালেও ব্যাথা কমে যায়।
খোস-পাচড়া ও চুলকানির ক্ষেত্রে নিমপাতার উপকারিতা
“নিমপাতা কোন রোগের মহৌষধ” এই প্রশ্নের জবাবে এক কথায় বলা যায় চর্মরোগের কথা। খোস-পাচড়া, চুলকানি বা এলার্জি হলে নিয়মিতভাবে নিমপাতা সিদ্ধ করে সেই পানিতে গোসল করলে চুলকানি, এলার্জি ভালো হয়। নিমপাতা ভেজে গুড়া করে সরিষা তেলের সাথে মিশিয়ে খোস-পাচড়া, চুলকানি বা এলার্জির স্থানে কয়েকদিন লাগালে ভালো ফল পাওয়া যায়।নিমগাছ একটি বহু ঔষধি গুণসম্পন্ন গাছ। বিধায় এই গাছের গুণাগুণ ও উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। উপরে উল্লেখিত গুণাগুণ ও উপকারিতা ছাড়াও চোখের যত্নে ও জন্ডিস রোগে এই নিমপাতার ব্যবহার রয়েছে। জন্ডিস রোগীদের ক্ষেত্রে নিমপাতার রস খাওযার নিয়ম হলো প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ২৫-৩০ ফোটা নিমপাতার রস একটু মধুর সাথে মিশ্রিত করে খেতে হবে।তাহলে জন্ডিস রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
নিমপাতার অপকারিতা
- অতিরিক্ত ব্যবহারে ত্বক সমস্যাঃ নিমপাতার রস বা তেল ত্বকে ব্যবহার করলে অনেক সময় ত্বকে অ্যালার্জি বা র্যাশ হতে পারে। বিশেষ করে যাদের ত্বক অতিরিক্ত সেনসিটিভ। নিমপাতার অতিরিক্ত ব্যবহারে ত্বকে শুষ্কতা, জ্বালা বা চুলকানির সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- গর্ভাবস্থায় ক্ষতিকর প্রভাবঃ গর্ভবতী মহিলাদের জন্য নিমপাতা ব্যবহার কিছু ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। এটি গর্ভপাত ঘটানোর বা গর্ভস্থ শিশুর ক্ষতি করার সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে, তাই গর্ভবতী মাহিলাদের এটি এড়িয়ে চলা উচিত।
- অতিরিক্ত মাত্রায় খেলে পেটের সমস্যাঃ নিমপাতা যদি বেশি পরিমাণে খাওয়া হয় তবে তা পেটের সমস্যা তৈরি করতে পারে যেমনঃ অম্বল, ডায়ারিয়া বা পেটের ব্যাথা। নিমপাতা অতিরিক্ত মাত্রায় খেলে শরীরের বিষাক্ত উপাদান বের হয়ে যেতে পারে তবে তা হজমের সমস্যাও সৃষ্টি করতে পারে।
- রক্তে চিনির মাত্রা কমানোঃ নিমপাতার গুণাগুণ হিসেবে এটি রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করতে পারে, কিন্তু যদি কেউ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত থাকে এবং নিমপাতা অতিরিক্ত ব্যবহার করে তবে তা রক্তের চিনির মাত্রা অতিরিক্ত কমিয়ে দিতে পারে যা বিপদজনক হতে পারে।
- যত্নের অভাবঃ যেহেতু নিমপাতা প্রাকৃতিক উপাদান তাই কিছু মানুষ এটি সঠিকভাবে ব্যবহার না করলে বা নিয়মিত ব্যবহারে সমস্যা হলে সেক্ষেত্রে নির্দিষ্ট পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
আপডেট ২৪ আইটি নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url