কালি জিরার উপকারিতা ও অপকারিতা

 

কালি জিরার উপকারিতা ও অপকারিতা এই সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানিনা। কালি জিরা এমন একটি উপাদান যা সকল রোগের মহৌষধ হিসেবে কাজ করে। আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা কালি জিরা গুণাগুণ, উপাকরিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানবো।
কালো-জিরার-উপকারিতা-ও-অপকারিতা-রাতে-কালোজিরা-খেলে-কি-হয়

কালি জিরাকে মত্যু ব্যতীত সকল রোগের মহৌষধ হিসেবে জানা যায়। কেন এবং কিভাবে কালি জিরা খেলে সকল রোগের মহৌষধ হিসেবে কাজ করবে তা জানতে এই আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়তে হবে। চলুন এবার কালি জিরার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত পড়া যাক।

পেজ সূচিপত্রঃ

কালি জিরার উপকারিতা

কালি জিরার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা জানতে চলেছি। আমাদের এই পৃথিবীতে যাহা কিছু আছে প্রতিটি জিনিসেরই যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমনই অপকারিতাও রয়েছে। উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়েই প্রতিটি জিনিস সৃষ্টি। হয়তো উপকারিতার পরিমাণ বেশি থাকলে অপকারিতার পরিমাণ কম। আবার উপকারিতার পরিমাণ কম হলে অপকারিতার পরিমাণ বেশি। 

প্রথমেই আমরা কালি জিরার উপকারিতা সম্পর্কে জানবো। কালি জিরা এমন একটি শক্তিশালী প্রাকৃতিক উপাদান যেটি মৃত্যু ব্যতীত সকল রোগের মহৌষধ হিসেবে কাজ করে। এর বর্ণনা কুরআনুল কারীমে করা হয়েছে। আসুন এবার জেনে নিই কালি জিরার উপকারিতাগুলো সম্পর্কেঃ

  • ঘন ঘন জ্বর সারাতে
  • সারা শরীরের ব্যাথা নিরাময়ে
  • মাথা ব্যাথা নিরাময়ে
  • স্মরণ শক্তি বৃদ্ধিতে
  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে
  • সর্দি সারাতে
  • বাতের ব্যাথা দূরীকরণে
  • বিভিন্ন প্রকার চর্মরোগ সারাতে
  • হার্টের সমস্যায়
  • ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণে
  • অশ্বরোগ (ঘোড়া রোগ) নিরাময়ে
  • হাঁপানি রোগ (শ্বাস কষ্ট) রোগ নিরাময়ে
  • জৈব শক্তি বৃদ্ধির জন্য
  • মেয়েদের অনিয়মিত মাসিক রোগের ক্ষেত্রে
  • দুগ্ধ দানকারিনী মায়েদের দুধ বৃদ্ধির জন্য
  • ত্বকের তারণ্য ধরে রাখার জন্য
  • গ্যাস্টিক রোগ নিরাময়ে
  • আমাশয় রোগ নিরাময়ে
  • জন্ডিস রোগ নিরাময়ে
  • লিভারের সমস্যা সমাধানে
  • পিঠে ব্যাথা দূর করার জন্য
  • শিশুর দৈহিক ও মানসিক বৃদ্ধিতে
  • হজমের সমস্যা দূরীকরণে
  • চুল পড়া বন্ধ করতে
  • দেহের সাধারণ উন্নতিতে
  • দাঁত ব্যাথা দূরীকরণে
  • রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে
  • পারকিনসন রোগ প্রতিকারে
  • চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে
  • চোখের ব্যাথা দূর করতে
ঘন ঘন জ্বর সারাতেঃ অনেকের মধ্যে দেখা যায় ঘন ঘন জ্বর আসে। এমনিতেই কিছুই মনে হচ্ছে না কিন্তু শরীরে জ্বর আছেই। এসব ক্ষেতে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে নিয়ম করে যদি কেউ অল্প পরিমাণ কালি জিরা খায় তবে তার আস্তে আস্তে ঘন ঘন জ্বরের সমস্যা দূর হবে।
   
সারা শরীরের ব্যাথা নিরাময়েঃ আমাদের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের কাজ করতে হয়। যেসব কাজ আমরা নিয়মিতভাবে করি না। এই অনিয়মিত কাজের জন্য শরীর ব্যাথা করে থাকে। অথবা স্বাভাবিক কাজের জন্যও শরীর ব্যাথা হয়ে থাকে। সারা শরীরের ব্যাথা নিরাময়ে এই কালি জিরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। কালি জিরা কোন কিছুর সাথে মাখিয়ে বা খালি পেটে যদি খাওয়া যায় তবে শরীর ব্যাথা ও জ্বরের ক্ষেত্রে খুবই কার্যকর। 

মাথা ব্যাথা নিরাময়েঃ অতিরিক্ত গরমে মাথা ব্যাথা নিত্য-নৈমিত্তিক একটি ব্যাপার। তবে অনেকেরই গরমকাল  ছাড়াও মাথা ব্যাথা হয়। এই মাথা ব্যাথা বিভিন্ন জনের বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। তবে যে ধরনের মাথা ব্যাথাই হোক না কেন কেউ যদি হাতের তালুতে অল্প পরিমাণে কালি জিরা নিয়ে দুই হাতে ঘষা দিয়ে কালি জিরার ঝাঁঝালো ঘ্রাণ নাক দিয়ে শুকে তবে তার মাথা ব্যাথা তাৎক্ষণিক কমে যাওয়ার কথা।

স্মরণ শক্তি বৃদ্ধিতেঃ বর্তমানে খাবারে ভেজালের কারণে আমাদের স্মরণ শক্তি লোপ পাচ্ছে। শুধু স্মরণ শক্তি না সারা শরীরের বিভিন্ন ক্ষমতা লোপ পাচ্ছে। তবে মেধার বিকাশে কালি জিরা খুবই উপকারী। কালি জিরা খেলে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়। মস্তিষ্কের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধির ফলে স্মরণ শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। 

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেঃ ডায়াবেটিস রোগের আরেকটি নাম হলে বহুমূত্র রোগ। প্রতিদিন সকালে যদি অল্প পরিমাণে কালি জিরা চিবিয়ে তা পানি দিয়ে গিলে খেলে রক্তে গ্লুকোজ এর মাত্রা কমে নিয়ন্ত্রণে থাকে। তবে ডায়াবেটিস রোগের ক্ষেত্রে ভাল ফল দেয় এক চা চামচ পরিমাণ কালি জিরার তেল এক কাপ রং চায়ের সাথে খেলে অথবা গরম ভাতের সাথে খেলে। 

সর্দি সারাতেঃ কালি জিরা তাৎক্ষণিক সর্দি সারাতে খুবই কার্যকর। অল্প পরিমাণ কালি জিরা হাতের তালুতে নিয়ে ঘষা দিয়ে অথবা এক টুকরা পরিস্কার কাপড়ে নিয়ে তা ঘষা দিয়ে নাক দিয়ে ঘ্রাণ শুকলে সাথে সাথে সর্দি হতে মুক্তি পাওয়া যায়।

বাতের ব্যাথা দূরীকরণেঃ বর্তমান সময়ে অস্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য অনেকের মধ্যেই বাত ব্যাথার সমস্যা দেখা দিচ্ছে। এই বাতের ব্যাথা দূরীকরণে কালি জিরার তেল বেশ কার্যকর। বাতের ব্যাথার স্থান ভালো করে পরিষ্কার করে সেখানে কলোজিরার তেল মালিশ করলে বাতের ব্যাথা দূর হয়। 

বিভিন্ন প্রকার চর্মরোগ সারাতেঃ বিভিন্ন প্রকার চর্মরোগ সারাতেও কালি জিরার তেল ব্যবহার করা হয়। কালি জিরার তেল আক্রান্ত স্থানে মালিশ করলে ধীরে ধীরে চর্মরোগ হতে মুক্তি পাওয়া যায়।

হার্টের সমস্যায়ঃ এক গ্লাস গরম দুধে এক চা-চামচ কালি জিরার তেল মিশিয়ে সকাল-বিকাল যদি খাওয়া যায় এবং বুকে শুধু কালি জিরার তেল মালিশ করলে হার্টের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণেঃ ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণে কালি জিরার তেল সারা শরীরে মালিশ করে দুটি রসুনের কোয়া খেয়ে আধা ঘন্টা সূর্যের তাপ লাগাতে হবে। তবে এক চা-চামচ কালি জিরার তেলের সাথে এক চা-চামচ মধু মিশিয়ে খেলে ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং রক্তে শর্করারপরিমাণ কমে যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী। কালি জিরার তেল ও মধু একসাথে খেলে নিম্নরক্তচাপ বৃদ্ধি করে ও উচ্চরক্তচাপ হ্রাস করে।   

অশ্বরোগ (ঘোড়া রোগ) নিরাময়েঃ অশ্বরোগ বা ঘোড়ারোগ নিরাময়ে কালি জিরার তেল ব্যবহৃত হয়। অশ্ব রোগের ক্ষেত্রে মাখন, তিলের তেল ও কালি জিরার তেল প্রত্যেকটি এক চামচ করে নিয়ে তিন/চার সপ্তাহ প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খেলে এই রোগ থেকে মুক্তি মিলে। 

হাঁপানি রোগ (শ্বাস কষ্ট) রোগ নিরাময়েঃ হাঁপানি বা শ্বাস কষ্ট রোগ নিরাময়ে কালি জিরা বেশ উপকারী। এই কালি জিরার ভর্তা প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় রেখে খেতে হবে এবং সেই সাথে গরম দুধ বা রং চায়ের সাথে এক চামচ কালি জিরার তেল মিশিয়ে দৈনিক তিনবার খেলে আস্তে আস্তে এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

জৈব শক্তি বৃদ্ধির জন্যঃ যৌনক্ষমতা বৃদ্ধিতে কালি জিরার ভূমিকা অপরিসীম। এই কালি জিরা নারী ও পুরুষের যৌনক্ষমতা বৃদ্ধিতে খুবই কার্যকর। প্রতিদিন কালি জিরা কোন খাবারের সাথে খেলে পুরুষের শুক্রানু সংখ্যা বৃদ্ধি পায় এবং পুরুষত্বহীনতা থেকে মুক্তির সম্ভাবনা তৈরি হয়। কালি জিরার তেল, জয়তুনের তেল ও মধু প্রত্যেকটি এক চা-চামচ করে নিয়ে দিনে তিন বার ৩ থেকে ৪ সপ্তাহ খেলে পুরুষের শুক্রানুর সংখ্যা বৃদ্ধি পায় ও পুরুষত্বহীনতা রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

মেয়েদের অনিয়মিত মাসিক রোগের ক্ষেত্রেঃ মেয়েদের অনিয়মিত মাসিকের ক্ষেত্রে কালি জিরার তেল বেশ উপকারী। এক কাপ কাঁচা হলুদের রসের সাথে অথবা আতপ চাল ধোঁয়া পানির সাথে এক চা-চামচ কালি জিরার তেল মিশিয়ে দিনে তিন বার খেলে মেয়েদের এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। যা শতভাগ কার্যকর। 

দুগ্ধ দানকারিনী মায়েদের দুধ বৃদ্ধির জন্যঃ যেসব মায়েদের বুকে দুধ আসে না তাদের জন্য শতভাগ কার্যকারী হিসেবে এই কালি জিরা কাজ করে। কালি জিরা পাওডার করে নিয়ে ৫ থেকে ১০ গ্রাম প্রতিদিন রাতে শোয়ার আগে এক গ্লাস দুধের সাথে মিশিয়ে খেলে ১০-১৫ দিনের মধ্যে বুকে দুধের প্রবাহ বেড়ে যাবে। এছাড়া ভাতের সাথে ভর্তা করে কালি জিরা খাওয়া যায় এই সমস্যায়। আবার কালি জিরার তেল এক চা-চামচ এবং মধু এক চা-চামচ নিয়ে খেলেও ভালো ফল পাওয়া যায়।

ত্বকের তারণ্য ধরে রাখার জন্যঃ ত্বকের তারণ্য ধরে রাখতে কালি জিরার গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ এই কালি জিরাতে রয়েছে লিনোলেইক ও লিনোলেনিক নামের এক ধরনের প্রয়োজনীয় ফ্যাটি এসিড যা পরিবেশের বৈরী প্রভাব ও স্ট্রেস থেকে ত্বককে রক্ষা করে, ত্বককে সুন্দর করে ও ত্বকের তারণ্য ধরে রাখে। কালি জিরার উপাদানগুলো ত্বকের গঠনে উন্নতি করে ও ত্বকের প্রভা বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। ত্বকের উজ্জ্বলতা পেতে হলে কালি জিরা ও মধু একসাথে মিশিয়ে পেস্ট করে ত্বকে লাগিয়ে আধা ঘন্টা বা এক ঘন্টা পর ধুয়ে ফেলতে হবে। ব্রণের সমস্যায় কালি জিরা ও আপেল সাইডার ভিনেগার দিয়ে পেস্ট বানিয়ে আক্রান্ত স্থানে লাগাতে হবে। এছাড়াও কালি জিরার গুড়া, কালি জিরার তেল ও তিলের তেল একসাথে করে ত্বকে লাগালে ত্বকের শুষ্ক ভাব দূর হয়।
  
গ্যাস্টিক রোগ নিরাময়েঃ বর্তমানে খাদ্যে ভেজালের কারণে বিভিন্ন সময় গ্যাস্টিকের সমস্যায় অনিচ্ছা স্বত্তেও পড়তে হয়। এক্ষেত্রে কালি জিরা নিয়মিতভাবে সকালে খালিপেটে খাওয়ার অভ্যাস করলে গ্যাস্টিকের সমস্যা হতে মুক্তি পাওয়া যায়। 

আমাশয় রোগ নিরাময়েঃ আমাশয় রোগ নিরাময়ের জন্য এক চা-চামচ কালি জিরার তেল ও সমপরিমান মধু একসাথে মিশিয়ে নিয়মিতভাবে দিনে তিনবার খেলে আশা করা যায় দুই-তিন সপ্তাহের মধ্যে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।

জন্ডিস বা লিভারের রোগ নিরাময়েঃ জন্ডিস বা লিভারের রোগ নিরাময়ে কালি জিরার তেল ব্যবহার করা যায়। তবে এক্ষেত্রে তিনটি যেকোন ফলের রসের সাথে এক চা-চামচ কালি জিরার তেল মিশিয়ে নিয়মিতভাবে দিনে তিনবার খেলে আশা করা যাচ্ছে যে চার-পাঁচ সপ্তাহের মধ্যে এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।

পিঠে ব্যাথা দূর করার জন্যঃ কালি জিরার তেল দিয়ে পিঠের ব্যাথার স্থানে মালিশ করলে ব্যাথা থেকে আরাম পাওয়া যায়। আবার শুধু কালি জিরা চিবিয়ে খেলেও ব্যাথার ক্ষেত্রে অনেক উপকার পাওয়া যায়।

শিশুর দৈহিক ও মানসিক বৃদ্ধিতেঃ শিশুর দৈহিক ও মানসিক বৃদ্ধিতে কালি জিরার গুরুত্ব অপরিসীম। তবে দুই বছরের কম বয়সের শিশুর ক্ষেত্রে এই কালি জিরা বা কালি জিরার তেল খাওয়ানো যাবে না। কিন্তু বাহ্যিক ব্যবহার করা যাবে। দুই বা তার অধিক বয়সের শিশুর ক্ষেত্রে কালি জিরা খাওয়ালে দ্রুত দৈহিক ও মানসিক বৃদ্ধি ঘটেে এবং সেই সাথে মস্তিষ্কের সুস্থতা ও স্মরণশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়। 

হজমের সমস্যা দূরীকরণেঃ হজম শক্তি বৃদ্ধিতে কালি জিরার ব্যবহার দেখা যায়। এক-দুই চা চামচ কালি জিরা প্রতিদিন দুই-তিন বার বেটে পানি দিয়ে খেলে হজমের সমস্যা ও পেট ফাঁপা রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।  

চুল পড়া বন্ধ করতেঃ কালি জিরার তেল নিয়মিত ব্যবহার করলে চুলের কোষের উন্নতি হয় এবং শক্তিশালী করে যার ফলে নতুন চুলের সৃষ্টি হয়। কালি জিরার তেল যেহেতু প্রাকৃতিক তাই চুলের গোড়া শক্ত করে ও চুল পড়া রোধ করে। 

দেহের সাধারণ উন্নতিতেঃ দেহের সাধারণ উন্নতিতে কালি জিরার গুরুত্ব অপরিসীম। কালি জিরা এমন একটি প্রাকৃতিক উপাদান যেটির কথা বলে শেষ করা যায় না। এই কালি জিরা নিয়মিতভাবে খেলে দেহের সার্বিক উন্নতি সাধন হয় এবং সেই সাথে দেহের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সতেজ ও স্বাভাবিক হয়। কালি জিরা মানব দেহের প্রতিটি রোগের প্রাকৃতিক ঔষধ হিসেবে কাজ করে। তাই বলা যায়, কালি জিরা মৃত্যু ছাড়া সকল রোগের ক্ষেত্রে কার্যকর। 

দাঁত ব্যাথা দূরীকরণেঃ কালি জিরা চিবিয়ে খেলে দাঁত ব্যাথার ক্ষেত্রে বেশ উপকার পাওয়া যায়। তবে কুসুম গরমে কালি জিরা দিয়ে কুলকুচি করলে দাঁত ব্যাথা কমে এবং জিহবা, তালু ও মাড়ির জীবণু ধ্বংস করে।

রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতেঃ রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে কালি জিরার গুরুত্ব অপরিহার্য। কালি জিরার ঔষধি গুণ কোন রোগ-বালাই কাছে ভিড়তে দেয় না। এটি প্রতিদিন সকালে খালিপেটে খেলে যেমন উপকার পাওয়া যায় তেমন রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। কালি জিরা খাওয়ার নিয়ম হলো শুধু কালি জিরা পানি দিয়ে খাওয়া যায় অথবা কয়েক ফোঁটা মধু দিয়েও খাওয়া যায়।
 
পারকিনসন রোগ প্রতিকারেঃ মস্তিষ্কের পারকিনসন রোগ হয়। আর এই রোগ থেকে মুক্তি পেতে হলে নিয়মিত কালি জিরা সেবন করা প্রয়োজন। তাহলে এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।

চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতেঃ চুলের বৃদ্ধিতে কালি জিরার তেল খু্বই উপকারী। এতে থাকা উপাদানগুলো চুলের কোষ সতেজ করে, চুল শক্তিশালী করে এবং চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে।

চোখের ব্যাথা দূর করতেঃ চোখের ব্যাথা দূর করতে কালি জিরার তেলের ভূমিকা অপরিসীম। চোখের ব্যাথা দূর করার জন্য রাত্রিতে শোবার আগে চোখের উভয় পাশে ও চোখের ভ্রু-তে কালি জিরার তেল মালিশ করতে হবে এবং সেই সাথে গাজরের রসের সাথে কালি জিরার তেল সেবন করতে হবে। তাহলে ধীরে ধীরে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। 

কালি জিরা খাওয়ার উপকারিতা

কালি জিরা খাওয়ার উপকারিতা কি? এই নিয়ে মানুষের জানার আগ্রহের শেষ নাই। কারণ কালি জিরা গুণাগুণ ও উপকারিতা এত বেশি যা বিস্তারিত আলোচনা করে শেষ করা যাবে না। আসুন এবার জেনে নিই কিভাবে, কখন, কতটুকু ও কোন সময় কালি জিরা খেলে কি ধরনের উপকারিতা পাওয়া যায় সে সম্পর্কে। কালি জিরা এই প্রাকৃতিক উপাদান দেখতে যতটা ছোট তার উপকারিতা ঠিক ততটাই বড় ও বিস্তৃত। 

কালি জিরা খুব অল্প পরিমাণে সকালে খালি পেটে খেলে চিবিয়ে খেলে হজমের সমস্যা, গ্যাসের সমস্যা, হাঁপানি, ঘন ঘন জ্বর, সর্দি, উচ্চ রক্তচাপ, হার্টের সমস্যা, মাথা ব্যাথা, বাতের সমস্যা, ডায়াবেটিস, ভুলে যাওয়ার প্রবণতা, ঘোড়া রোগ, জৈবিক শক্তি না পাওয়া, মেয়েদের মাসিকের সমস্যা, চুল পড়া সমস্যা, রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, দাঁত ব্যাথা, দেহের সার্বিক উন্নতি ইত্যাদির সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

তবে শুধু কালি জিরা খেতে না পারলে অল্প পরিমাণ কালি জিরার সাথে কয়েক ফোঁটা মধু মিশিয়ে খাওয়া যায়। এখন অনেকে কালি জিরার তেলও বিভিন্ন সমস্যায় ব্যবহার করে থাকে। কারো পিঠে ব্যাথা অনুভব করলে কালি জিরার তেল সেখানে মালিশ করা যায়। এতে ব্যাথার পরিমাণ কমে। আবার কালি জিরার তেল রং চা বা গরম দুধের সাথে মিশিয়ে খেলেও অনেক উপকার পাওয়া যায়। তবে যে বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে তা হলো দুই বছরের কম এরকম বাচ্চা ও গর্ভবতী মহিলারা এই কালি জিরা সেবন থেকে বিরত থাকতে হবে।     

টানা ৭ দিন কালি জিরা খেলে কি হয়

টানা ৭ দিন কালি জিরা খেলে কি হয়? এই প্রশ্নের উত্তরে বলা যায়, কালি জিরা বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। যেহেতু কালি জিরাকে সকল রোগের প্রতিষেধক হিসেবে বিবেচনা করা হয় সেই কারণে কালি জিরার উপকারিতার মধ্যে একটি হলো টানা ৭ দিন কালি জিরার সেবন। চলুন এবার আলোচনা করা যাক টানা সাত দিন কালি জিরা খেলে কি হয় এ সম্পর্কে। 

কালি জিরা  শুধু যে খাবারের স্বাদ বৃদ্ধিতে ব্যবহৃত হয় তা  কিন্তু নয়। কালি জিরার বহু গুণের মধ্যে একটি হলো টানা ৭ দিন কালি জিরা সেবনে পুরুষ ও নারীদের জৈবিক দুর্বলতা দূর হয়। নারী-পুরুষের যৌন আকাঙ্ক্ষা বৃদ্ধি পায়। তবে যৌন আকাঙ্ক্ষা বৃদ্ধির জন্য সঠিক নিয়মে কালি জিরা খেতে হবে। এ ধরনের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে  টানা ৭ দিন কালি জিরা কিভাবে বা কি নিয়মে খাবেন তাও জানা জরুরি। 

আসুন এবার জেনে নিই ভালো ফলাফল পেতে কালি জিরা কি নিয়মে খাবেন। কালি জিরা এমন একটি প্রাকৃতিক উপাদান যেটিতে প্রচুর পরিমাণে মানবদেহের প্রয়োজনীয় ভিটামিন, আয়রন, ফসফরাস ও ক্যালসিয়াম থাকে। এই কালি জিরা সামান্য ভেজে গুড়া করে গরম দুধের সাথে মিশিয়ে সকালে ও রাতে সেবন করলে আশানুরূপ ফলাফল পাওয়া যায়। তবে এই মিশ্রণটি খেয়ে কারও সমস্যা দেখা দিলে না খাওয়ায় ভালো।  

  

কালি জিরার তেলের উপকারিতা

কালি জিরার তেলের উপকারিতা কি এ বিষয়ে এখন জানবো। কালি জিরার তেলের উপকারিতা অনেক। কালি জিরা ও কালি জিরার তেল দুটিকেই বিভিন্ন রোগের সমাধানে ব্যবহার করা হয়। শুধু কালি জিরা চিবিয়ে অনেকে খেতে পারে না। বিধায় কালি জিরার তেল খাওয়ার মাধ্যমে সমাধান পাওয়া যায়। এখন জানার বিষয় কালি জিরার তেল কিভাবে খাবেন? 
কালো-জিরার-উপকারিতা-ও-অপকারিতা-রাতে-কালোজিরা-খেলে-কি-হয়

কালি জিরার তেল সরাসরি ভাতের সাথে খাওয়া যায়। আবার গরম দুধ বা রং চায়ের সাথেও খাওয়া যায়। কালি জিরার তেল খাওয়ায় যে ধরনের উপকারগুলো পাওয়া যায় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো  দেহের বিভিন্ন জয়েন্টের ব্যাথা কমায়, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে, হজমের সমস্যা দূর করে, মাথা ব্যাথা থেকে মুক্তি দেয়, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে, কিডনি সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়, দাঁত মজবুত করে, হাঁপানি রোগ দূর করে এবং স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে ইত্যাদি।

কালি জিরার তেলের আরেকটি উল্লেখযোগ্য উপকার আছে তা হলো পুরুষদের গোপন সমস্যা সমাধানে। আসুন এবার জেনে নিই কিভাবে এই কালি জিরার তেল ব্যবহার করে সমস্যার সমাধান পাওয়া যায়। যদি কোন পুরুষের গোপনাঙ্গের কোন সমস্যা থাকে তবে এই কালি জিরার তেল নিয়মিতভাবে মালিশ করলে দ্রুত সমস্যার সমাধান পাওয়া যায়। তবে অতিরিক্ত ব্যবহার কোন কিছুর জন্যই ভালো নয়।  

মধু ও কালি জিরা খাওয়ার উপকারিতা


চুলের যত্নে মেথি ও কালি জিরা ব্যবহার

সকালে খালি পেটে কালি জিরা খাওয়ার উপকারিতা


রাতে কালি জিরা খেলে কি হয়

প্রতিদিন কতটুকু কালি জিরা খাওয়া উচিত

কালি জিরা খাওয়ার নিয়ম

পুরুষাঙ্গে কালি জিরার তেল ব্যবহারের নিয়ম

কালি জিরা চিবিয়ে খাওয়ার উপকারিতা

কালি জিরা চিবিয়ে খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে এখন বিস্তারিত জানবো। শুধু কালি জিরা চিবিয়ে খেতে পারলে সবচেয়ে ভালো উপকারিতা পাওয়া যায়। কালি জিরা মানবদেহের এমন একটি উপকারী উপাদান যেটিতে দেহের রোগ-প্রতিরোধের সকল উপাদান বিদ্যমান। অল্প পরিমাণ কালি জিরা হাতের তালুতে নিয়ে সকালে খালি পেটে চিবিয়ে খেলে দেহের বিভিন্ন সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। 
কালো-জিরার-উপকারিতা-ও-অপকারিতা-রাতে-কালোজিরা-খেলে-কি-হয়
পিঠে ব্যাথা, হাঁপানি রোগ, শ্বাস কষ্ট, ডায়াবেটিস, চুল পড়া, মাথা ব্যাথা, হার্টের সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ, মেয়েদের পিরিয়ডের সমস্যা, মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধি, জন্ডিস বা লিভারের সমস্যা, ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি, কোলেস্টরেল কমাতে, হজম শক্তি বৃদ্ধি, স্মরণ শক্তি বৃদ্ধি, জৈবিক শক্তি বৃদ্ধি ও গ্যাসের সমস্যা ইত্যাদি  সমাধানে খুবই কার্যকরী ভূমিকা রাখে এই কালি জিরা। 

এই কালি জিরা আয়ুর্বেদিক ও ভেষজ চিকিৎসায় বহুল ব্যবহৃত হয় । প্রাচীনকাল থেকেই এই কালি জিরা ব্যবহার খাবারের স্বাদ বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। আমাদের সকলের উচিত কালি জিরা  চিবিয়ে খাওয়া এবং শরীর ও মন কে সতেজ, সুস্থ ও উৎফুল্ল থাকা। এই কালি জিরা আমাদের শরীরের জন্য প্রাকৃতিক চিকিৎসক।

প্রতিদিন কালি জিরা খেলে কি ক্ষতি হয়

কালি জিরার অপকারিতা

কালি জিরার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আলোচনার এ পর্যায়ে কালি জিরার অপকারিতা নিয়ে কিছু বিষয় জানা যাক। কালি জিরার এত উপকারিতার মধ্যেও ব্যবহারের অতিরিক্ততার জন্য কিছু অপকারিতাও রয়েছে। 

শেষ কথা

প্রিয় পাঠক! কালি জিরা শুধু যে রান্না-বান্না ও বিভিন্ন খাবারের স্বাদ বৃদ্ধির আওতায় সীমাবদ্ধ তা কিন্তু নয়। আশা করি আজকের  এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়েই তা বুঝতে পেরেছেন। এই আর্টিকেলে জানানোর চেষ্টা করেছি কালি জিরা খেলে কি কি উপকার পাওয়া যায়, কতটুকু খেতে হবে, কিভাবে খেতে হবে, অতিরিক্ত খেলে কি ক্ষতি হবে এবং এর অপকারিতা নিয়ে বিস্তারিত।

এই আর্টিকেল মনোযোগ দিয়ে পড়লেই বুঝা যাবে যে, কালি জিরার উপকারিতা ও অপকারিতা কতটুকু ও কালি জিরা আমাদের খাওয়া উচিত কিনা। আপনি যদি একজন স্বাস্থ্য সচেতন লোক হন তবে আপনার এই কালি জিরা সেবন করা শতভাগ প্রয়োজন এবং সেই সাথে বলা যায় যারা বিভিন্ন রোগে ভুগছেন এই কালি জিরা বা কালি জিরার তেল নিয়মিতভাবে সেবন করলে আস্তে আস্তে মহান আল্লাহর রহমতে রোগ থেকে মুক্তি পাবেন। 

তবে কোন সমস্যা হলে এটি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। এ  ধরনের আরো আর্টিকেল পড়তে আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন। ধর্য্য ধরে আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।    


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আপডেট ২৪ আইটি নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url