এলোভেরার উপকারিতা ও অপকারিতা
এলোভেরার অপকারিতা ও উপকারিতা-শুধু এলোভেরা মাখলে কি হয় এই পোস্টের মাধ্যমে আজকে আমরা বিস্তারিত জানবো। এলোভেরা উদ্ভিদের আর একটি নাম বা বাংলা নাম হলো ঘৃতকুমারী উদ্ভিদ। ঘৃতকুমারী বাংলা শব্দ হলেও মানুষ একে এলোভেরা বলেই বেশি চিনে।
পেজ সূচিপত্রঃ
এলোভেরা খাওয়ার উপকারিতা
এলোভেরা খাওয়ার উপকারিতা প্রচুর। কারণ এতে প্রচুর পরিমাণে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান রয়েছে। এলোভেরাতে থাকা উপাদানগুলো হজমশক্তি বাড়ায়। এতে থাকা ল্যাকটেটিভ উপাদান পেট পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। এলোভেরার জুস ক্লান্তি দূর করে দেহকে সতেজ করে। এর ভেষজ গুণের কারণে আমাদের দেহের রক্তচাপ কমে এবং রক্তে কোলেস্টরল ও সুগারের মাত্রা স্বাভাবিক অবস্থায় আনতে সাহায্য করে।
আরো পড়ুনঃ নিমপাতার উপকারিতা ও অপকারিতা
বিভিন্ন ধরনের ক্ষত ও চর্মরোগ সারাতে এটি ব্যবহার করা হয়। এলোভেরাতে প্রচুর পরিমাণে পানি থাকায় এটি শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে। ক্ষতিকর পদার্থ দেহ থেকে অপসারণের ক্ষেত্রেও ভূমিকা পালন করে। এলোভেরার আঠালো রস খাদ্যনালী ও পরিপাকতন্ত্রকে পরিষ্কার করে। এর পুষ্টি উপাদানগুলো হাড় ও মাংশপেশীকে শক্তিশালী করে এবং হার্টের সমস্যা প্রতিরোধ করে থাকে।
দেহের ভারসাম্য রক্ষা করতে ও রোগ-প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে আরও সচল করতে এর পুষ্টি উপাদান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি নামক এলোভেরার উপাদান শরীরে জমে থাকা অতিরিক্ত চর্বি, মেদ বা ভূড়ি ইত্যাদি দূর করে এবং ওজন কমাতে সাহায্য করে থাকে কোন রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়ায়। নিয়মিতভাবে এলোভেরা খাওয়ার অভ্যাস আমাদেরকে সুস্থ রাখতে অন্যতম ভূমিকা পালন করবে।
খালি পেটে এলোভেরা খাওয়ার উপকারিতা
অনেকেই জানতে চান যে, “খালি পেটে এলোভেরা খেলে কি হয়?” আমরা সকালে ওঠে কি খাচ্ছি বিষয়টি কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সকালে পেট খালি থাকে এসময় আমাদের সকলের এমন কিছু খাওয়া উচিত যে খাবার গুলো পুষ্টিগুণে ভরপুর এবং আমাদের শরীরকে শক্তি জোগায় ও সুস্থ রাখে। এক্ষেত্রে আমরা সকালে খালি পেটে এলোভেরার শরবত করে খেতে পারি। নিচে খালি পেটে এলোভেরা খাওয়ার কিছু উপকারিতা তুলে ধরা হলোঃ-
- এলোভেরাতে এনজাইম থাকে যা হজম প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করে। কোষ্ঠ্যকাঠিন্যের সমস্যা থাকলে এলোভেরার শরবত খুবই উপকারী।
- এলোভেরায় প্রচুর পরিমাণে পানি খাকায় সকালে খালি পেটে এলোভেরার শরবত খেলে শরীর হাইড্রেট হয়ে শরীর থেকে খারাপ টক্সিন বের করে দেয়। এতে করে শরীর পরিষ্কার হয় এবং শরীরের ইলেকট্রোলাইট ব্যালেন্স ঠিক থাকে।
- প্রয়োজনীয় ভিটামিন, খনিজ ও রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির সকল উপাদান উপস্থিত থাকার কারণে সকালে খালি পেটে এলোভেরার শরবত খেলে বিভিন্ন পুষ্টির ঘাটতি পূরণ হবে এবং নিজেকে সুস্থ রাখা সম্ভব হবে।
- এলোভেরাতে যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে তা ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। এটি ব্যবহারে ত্বক ও চুল সতেজ ও ঝলমলে থাকে।
পুরুষদের জন্য এলোভেরার উপকারিতা
শরীরকে সুস্থ রাখতে ও শক্তিশালী করতে এলোভেরার গুরুত্ব অপরিসীম। এটি খাওয়ার ফলে শরীরে যেমন বয়সের ছাপ পরে না, তেমনি করে যৌবনও ধরে রাখতে সাহায্য করে। বর্তমানে দেখা যায় মেয়েদের পাশাপাশি পুরুষদের ত্বকেও বিভিন্ন ধরনের সমস্যা। এলোভেরার জুস করে নিয়মিতভাবে সেবন করলে পুরুষ ও মহিলাদের ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দূর হয় এবং ত্বকের গভীর থেকে সুন্দর, আকর্ষণীয় ও কোমল করে তোলে। এতে করে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়। পুরুষদের জন্য এলোভেরার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেয়া যাকঃ-
বয়স কমাতেঃ এলোভেরাতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন থাকায় ত্বককে ভিতর থেকে সুস্থ ও সতেজ রাখতে সাহায্য করে। এতে থাকা ভিটামিন বি ও বিটা ক্যারোটিন এ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বককে ফ্রি রেডিক্যাল থেকে রক্ষা করতে সাহাহ্য করে। সেজন্য ত্বকের বলিরেখা ও বয়সের ছাপ সহজে পড়ে না। মৃত কোষগুলোকে প্রাণবন্ত ও ত্বককে ভিতর থেকে টানটান করতে সাহায্য করে পাপায়েন নামক উপাদান যা এলোভেরাতে বিদ্যমান।
হার্টের কার্যক্ষমতা বাড়াতেঃ নারীদের তুলনায় পুরুষদের বর্তমানে হার্টের সমস্যা বেশি দেখা যায়। তবে বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিতভাবে ্এলোভেরার জুস খেতে পারলে শরীরে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত প্রবাহ বাড়তে থাকে। এতে করে শরীরের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং হার্টের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। রক্তে খারাপ কোলেস্টরলের পরিমাণ হ্রাস পায়। এতে করে হার্টের সমস্যা দূর হয় এবং হার্ট এ্যাটাক হওয়ার সম্ভাবনা করে যায়।
শরীর থেতে টক্সিন নির্মূল করতেঃ এলোভেরা শরীর থেকে টক্সিন বের করার ক্ষেত্রে খুবই কার্যকারী। এই টক্সিন এর কারণে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ অচল বিকলাঙ্গ হয়ে পড়ে ও শরীরের কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে, প্যারালাইসিসের মতো রোগ ও হয়ে থাকে। তবে আমরা যদি নিয়মিতভাবে এলোভেরা খেতে পারি তবে এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট নামক উপাদান শরীর থেকে টক্সিন বের করে দিয়ে শরীরকে শক্তিশালী ও কর্মক্ষম করে তুলে।
ওজন কমাতেঃ এলোভেরার মধ্যে এমন কিছু ভেষজ গুণ রয়েছে যার কারণে শরীরের অতিরিক্ত মেদ, ভূড়ি ও ওজন কমাতে সাহায্য করে। এলোভেরার মধ্যে উপস্থিত খনিজ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট দ্রুত ওজন কমাতে ও ক্ষুধা নিবারণ করতে সাহায্য করে থাকে। ক্ষুধা নিবারণে এটি বেশ ভূমিকা পালন করে থাকে। এজন্য দ্রুত ওজন কমাতে এই এলোভেরার ব্যবহার হয়ে থাকে। ওজন কমনোর জন্য এলোভেরার শরবত সকালে খালি পেটে খাওয়া উত্তম।
রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেঃ বর্তমানে আমরা যা খাচ্ছি তাতেই ভেজাল এই কারণে শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে। এলোভেরার জুসে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, খনিজ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে শরীরকে শক্তিশালী করে তোলে। আমাদের এই দৈনন্দিন জীবনে সুস্থ ও ভালো থাকতে হলে নিয়ম করে এলোভেরার জুস খেতে হবে।
কোষ্ঠ্যকাঠিন্যের সমস্যা দূর করতেঃ কোষ্ঠ্যকাঠিন্যের সমস্যা দূর করার জন্য এলোভেরার বিকল্প নাই। এলোভেরার জুস খেলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। কোষ্ঠ্যকাঠিন্য রোগে মানুষের জীবন বিষাদময় করে তোলে। তাই কোষ্ঠ্যকাঠিন্য সমস্যায় এলোভেরার জুস খুবই উপকারী। এলোভেরা সকালে খালি পেটে সেবন করতে পারলে যে শুধু কোষ্ঠ্যকাঠিন্য থেকে মুক্তি মিলে তা কিন্তু নয় শরীর ও ত্বক ভালো রাখতে ব্যবহার করা হয়। এর জুস সেবনে রক্তে লোহিত রক্ত কণিকার উৎপাদন বৃদ্ধি পায় এবং গ্যাস্টিকের সমস্যাও ভালো হয়।
এলোভেরার পুষ্টিগুণ
এতে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও খনিজ উপাদান রয়েছে। যেমন- ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন ই , ভিটামিন বি১, ভিটামিন বি-২, ভিটামিন বি৩, ভিটামিন বি১২, ক্যালসিয়াম, জিঙ্ক, ম্যাগনেশিয়াম, ক্রোমিয়াম, সোডিয়াম, আয়রন, পটাশিয়াম, কপার, ম্যাঙ্গানিজ ইত্যাদি প্রচুর পরিমাণে আছে। এছাড়াও শরীরের জন্য অত্যাবশ্যক সব অ্যামাইনো এসিড, কোলিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে।
এলোভেরা খাওয়ার নিয়ম
এলোভেরার জেল ব্যবহারের নিয়ম
- ত্বকের ময়েশ্চারােইজার হিসেবেঃ শরীর ও মুখে ময়েশ্চাইজার হিসারে নিয়মিত ব্যবহার করা যায়। এলোভেরার জেল ত্বককে হাইড্রেটেড করে এবং ত্বকের স্বাভাবিক আদ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
- পোড়া ত্বকের জন্যঃ ত্বকে জালাপোড়া ভাব করলে এলোভেরার জেল ব্যবহার করা যায়। দিনে দুই থেকে তিনবাব ব্যবহার করা যায় অথবা যতক্ষণ আরাম না পাওয়া যায়।
- ত্বকের সুরক্ষার জন্যঃ ত্বকে, হাতে বা পাঁয়ে এলোভেরার জেল লাগানোর পূর্বে ভালো করে পরিষ্কার করে নিন। তারপর সরাসরি ত্বকে লাগান এবং হালকা হাতে ম্যাসেজ করুন। এভবে ১৫-২০ মিনিট রাখার পর ধুয়ে ফেলুন।
- প্রাকৃতিক স্কিন পিলিংঃ ত্বকের মৃত কোষগুলো দূর করতে এলোভেরা জেল খুবই উপকারী। প্রত্যেক সপ্তাহে এক থেকে দুইবার যদি এলোভেরার জেল দিয়ে ত্বকে ম্যাসেজ করা যায় তবে ত্বকের মৃত কোষ দূর করতে সাহায্য করে।
- চুলের যত্নেঃ চুল নরম ও মশ্চেরাইজ করতে এলোভেরার জেল ব্যবহার করা হয়। এলোভেরা জেল চুলে ব্যবহারের নিয়ম হলো- চুল ধোয়ার ২০ মিনিট পূর্বে এলোভেরার জেল চুলে লাগিয়ে ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলতে হবে।
- ব্যকটেরিয়া ও ইনফেকশনের জন্যঃ এলোভেরার জেল ব্যকটেরিয়া ও ইনফেকশন বিরোধী। কেটে গেলে বা ক্ষত হয়ে গেলে এলোভেরার জেল সেই স্থানে লাগালে ব্যকটেরিয়ার আক্রমণ হ্রাস পায় এবং ইনফেকশন হওয়ার মাত্রা কমে যায়।
এলোভেরা মুখে দিলে কি হয়
এলোভেরা দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায়
- ২ টেবিল চামচ এলোভেরা জেল
- ১ টেবিল চামচ মধু।
- প্রথমে একটি পরিষ্কার বাটিতে ২ টেবিল চামচ এলোভেরা জেল নিয়ে ১ টেবিল চামচ মধু যোগ করুন।
- এটি ভালোভাবে মিশিয়ে ত্বকে লাগান।
- ১৫-২০ মিনিট রাখুন এবং তারপর গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
- ২ টেবিল চামচ এলোভেরা জেল
- ১ টেবিল চামচ লেবুর রস।
- এলোভেরা জেল ও লেবুর রস মিশিয়ে ত্বকে লাগান।
- ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।
- ২ টেবিল চামচ এলোভেরা জেল
- ১ টেবিল চামচ গ্লিসারিন।
- এলোভেরা জেল ও গ্লিসারিন মিশিয়ে ত্বকে লাগান।
- রাতে এটি ব্যবহার করতে পারেন এবং সকাল বেলা ধুয়ে ফেলুন।
- ১ টেবিল চামচ এলোভেরা জেল
- ১ টেবিল চামচ দুধ।
- এলোভেরা জেল ও দুধ একত্রিত করে মিশ্রণ তৈরি করুন।
- ত্বকে লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট অপেক্ষা করুন এবং তারপর ধুয়ে ফেলুন।
এলোভেরার অপকারিতা
ভেষজ উদ্ভিদ হিসেবে এলাভেরা বা ঘৃতকুমারী চিনেন না এমন মানুষ খুব কমই আছে। এলোভেরা বা ঘৃতকুমারীর যেমন গুণাগুণ ও উপকারিতা আছে তেমনি কিছু অপকারিতাও আছে। এলোভেরার অতিরিক্ত ব্যবহার ক্ষতির কারণ হতে পারে।
- এলোভেরা প্রচুর পরিমাণে খাওয়া যাবে না। এটি খাওয়ার ফলে রক্ত বৃদ্ধি পায় এবং রক্ত চলাচল ত্বরান্বিত হয়। তাই অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে কিডনির ক্ষতি হতে পারে।
- এলোভেরার পাতা যখন গাছ থেকে কাটা হয় তখন এক ধরনের হলুদ কস বের হয়। এটি ত্বক ও শরীরের জন্য ক্ষতিকর। তাই এলোভেরা ত্বক ও শরীরে ব্যবহারের ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে এই. কস যেন ব্যবহার করা না হয়। এর জন্য গাছ থেকে এলোভেরা পাতা কাটার পর ১৫ মিনিট পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। তারপর ব্যবহার এলোভেরা ব্যবহার উপযোগী হবে।
- এলোভেরার রস বা জুস অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া যাবে না। এলোভেরার জুস অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে প্বার্শপ্রতিক্রিয়া হিসেবে ডায়ারিয়া বা পাতলা পায়খানা হতে পারে।
- গর্ভাবস্থায় এলোভেরা খাওয়া একেবারেই নিষিদ্ধ। এসময় এলোভেরা খেলে স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।
- এলোভেরা অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে গ্যাস্টিকের সমস্যা হয়। সেই সাথে বমি বমি ভাব, মাথা ব্যাথা, পেট ব্যাথা ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়।
আপডেট ২৪ আইটি নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url